রবিবার কেন্দ্রীয় সম্মেলন;ঐক্যবদ্ধ হেফাজত।আন-নূর মিডিয়া
রবিবার কেন্দ্রীয় সম্মেলন;ঐক্যবদ্ধ হেফাজত
বিশেষ প্রতিবেদন|আন-নূর মিডিয়া
আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় সম্মেলন (কাউন্সিল) ডেকেছে দেশের আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
আগামীকাল রোববার (১৫ নভেম্বর) হেফাজতের দুর্গ বলে খ্যাত চট্টগ্রামের দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
ওই দিন সকাল ১০টা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাউন্সিল চলবে।
এতে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমীর ও বর্তমান আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩শ' শীর্ষ নেতা ঠিক করবেন কে হবেন সদ্যপ্রয়াত আল্লামা আহমদ শফির উত্তরসূরি।
ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যের সুবাতাস শুরু হয়েছে। তবে এ কাউন্সিল বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
উল্লেখ্য ; গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতের আমীর শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী (রহঃ) এর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির আমীরের পদ শূন্য হয়।সেদিনই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পরামর্শের ভিত্তিতে আমীর ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছিলেন হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব মাজলুম জননেতা আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী
আগামী ১৫ নভেম্বর কাউন্সিল ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিলেন তারা। এ কাউন্সিলে নায়েবে আমীর, যুগ্ম মহাসচিব, প্রচার সম্পাদকসহ একাধিক পদ থেকে আল্লামা শফী অনুসারীরা বাদ পড়তে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের আমীর হিসেবে ৩ জনের নাম আলোচনায় আসছে। তারা হলেন- হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী এবং ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।
তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের হেফাজত কর্মীরা মনে করছেন, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দুজনের যে কোনো একজনই হবেন হেফাজতের পরবর্তী আমীর।
এক্ষেত্রে হেফাজতের নতুন আমীর হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই বলে বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে বলে দাবি অনেকেরই।
এছাড়া সংগঠনটির মহাসচিব পদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মাওলানা শেখ আহমদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আহকাম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকার জামিয়া রহামানিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মামুনুল হকের নাম উল্লেখযোগ্য বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতা যুগান্তরকে বলেন, কওমি অঙ্গন ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ হেফাজতের কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের একটাই চাওয়া হেফাজত আমীর ও মহাসচিব পদে সবার গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই এমন কাউকে নির্বাচিত করা হোক।
পাশাপাশি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবেন এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাবে।
এছাড়া সারা দেশে বিস্তৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত সংগঠনের মূল নেতৃত্বে অভিজ্ঞ, দূরদর্শী এবং নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের আসা উচিত।
আগামীকাল ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেমরা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে জানান হেফাজতের হাটাহাজারী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।
তিনি জানান, হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩শ’ জন কেন্দ্রীয় শীর্ষ মুরব্বিরাই ঠিক করবেন কে প্রয়াত আল্লামা শফীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ইতোমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে।
অন্যদিকে সংগঠনটির শুরুর দিকে নানা কারণে সরে দাঁড়ানো কওমি অঙ্গনের শীর্ষ বেশ কয়েকজন আলেম ফের যুক্ত করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম দারুল মা'আরিফ মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী, পটিয়া আল-জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসার আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী,ও বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি আরশাদ রহমানি ও অন্যতম বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক অরাজনৈতিক কওমি আক্বীদা ভিত্তিক ইসলামী সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ।
ওই সম্মেলনে প্রয়াত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমীর মনোনীত হন। শুরুতে চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফ মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভীকে মহাসচিব করা হলেও কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে তিনি সরে দাঁড়ালে পরে এ দায়িত্ব দেয়া হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে।
নবী ও রাসূলের অবমাননা, নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।
Post a Comment