করোনাকালে অনেকেই হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি আলেমসমাজ।
করোনাকালে অনেকেই হারিয়ে গেলেও
হারিয়ে যায়নি আলেম সমাজ
—————————————
ইহসানুল হক
আন-নূর:প্রায় চার মাসের এই লকডাউনে অনেক নিষ্ঠুরতার সাক্ষী আমাদের হতে হয়েছে। সন্তান মাকে ফেলে এসেছে জঙ্গলে। বাবাকে বস্তাবন্দি করে রেখে এসেছে রাস্তায়। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা বাবা এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করেও লাভ হয়নি। মৃত্যু বরণের পর এলাকাবাসী লাশ বহনের খাটিয়া দেয়নি। কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। জানাযা পড়তেও কেউ আসেনি। এমন অনেক নিষ্ঠুরতার গল্প আমরা জানি। বলতে চাইলে আরও অনেক বলা যাবে।
হটাৎ থমকে যাওয়া পৃথিবীতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। মধ্যবিত্তরাসহ দিনমজুর কয়েক কোটি মানুষ সীমাহিন অর্থ কষ্টে নিপতিত হয়েছে। সরকার নানা ধরনের মুখরোচক প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও এতে কার সংকট যে দূর হলো তা আল্লাহই ভালো জানেন। করোনা ছাড়া সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা বলা যায় এখন বন্ধই হয়ে গেছে। সাধারণ কোনো রোগী নিয়ে যে হাসপাতালে গিয়েছে সেই কেবল জানে অবস্থাটা কি। জনগণের সেবার নামে রাজনীতি করা অনেক নেতাদের এখন খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এই কঠিন দুঃসময়ে এভাবে অনেকেই হারিয়ে গেলেও হারায়নি আলেম সমাজ। তারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সমাজে ধর্মীয় যে দায়িত্ব তারা পালন করে থাকে, সেখান থেকে তারা পিছু হটেনি। করোনা আতংকে মানুষ কত কাজই তো ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সারা দেশে এত এত মসজিদ। কেনো মসজিদের ইমাম কি বলেছে আমরা নামাজ পড়াতে পারবো না। এত মানুষ মসজিদে আসে। করোনা রোগীও আসতে পারে। এটা বলেছে কেউ? বলেনি। তারা কি সরকারের কাছে পিপিই চেয়েছে? তাও চায়নি। তাদের কি আতংকের কিছু নেই?
ব্যাপারটা নিশ্চয় এমন না যে তারা মনে করে উলামায়ে কেরামের করোনা হবে না। আলেম, জালেম, ভালো, মন্দ যে কারোই করোনা হতে পারে। তবে আল্লাহ পাক যার ক্ষেত্রে চাইবেন তারই হবে। মানুষের মধ্যে থাকলেই হবে, আর পালিয়ে গেলেই হবে না এমনটা নয়। যে কারোই হতে পারে। এবং হলেই যে মরে যেতে হবে তাও নয়। আল্লাহ পাক যখন মৃত্যু অবধারিত রেখেছেন তখনই মরতে হবে,এই বিশ্বাস আছে বলেই উলামায়ে কেরাম সবার আগে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে।
বাবা মার লাশ যখন সন্তান স্পর্শ করে না। স্বামী যখন স্ত্রীর লাশের ছায়াও দেখতে চায় না তখন এগিয়ে এসেছে উলামায়ে কেরাম। সরকারি অনুমোদনে মুফতি শহিদুল ইসলামের আল মারকাজুল ইসলামী লাশ দাফনের যুগাম্তকারি কাজ করে যাচ্ছে। মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন জেলায় লাশ দাফনের কাজ করছে। এভাবে সারা দেশেই উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যানারে একত্রিত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন। উলামায়ে কেরামের এই অবদান কি জাতি স্মরণ রাখবে?
শুধু লাশ দাফনই নয়, দিনমজুর অসহায় ও অর্থের অভাবে না খেয়ে থাকা মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণে ঝাপিয়ে পড়েছে উলামায়ে কেরাম।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, তাকওয়া ফাউন্ডেশন, রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন, ইকরামুল মুসলিমিন, হাফেজ্জি হুজুর সেবাসংস্থা, যুব মজলিসসহ উলামাদের নেতৃত্বে পরিচালিত আরও অনেক সংগঠনের উদ্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছেছে। দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতায় উলামাদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে গেছে দেশের আনাচে কানাচে। বিশেষকরে রমজানে উলামায়ে কেরামের এই ত্রাণ তৎপরতায় অসংখ্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। উলামায়ে কেরামের এই অবদান জাতির সামনে তুলে ধরার কেউ কি আছে?
অথচ সবচেয়ে বেশি অর্থ সংকটে থাকা শ্রেণির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই আলেম সমাজ। সারা দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধ। বেতন ভাতাও অধিকাংশের বন্ধ। তবুও তারা করোনাভয়ে অমানুষ হয়নি। দায়িত্ব থেকে পিছু হটেনি। কোনো আপনজন অসুস্থ হলে রাস্তায় ফেলে আসেনি। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। যেই ধর্মীয় শিক্ষা জাতির দুর্দিনে এই মহান কর্মে তাদের নিয়োজিত করলো সেই ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে। সমাজে উলামায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে।
আর হ্যাঁ, বিপর্যস্ত এই সময়ে মানুষের সেবা শুধু আলেমরাই করছে না। আরও অনেকেই মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন। সবচেয়ে বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন ডাক্তার ও চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পৃক্ত শ্রেণি। সরাসরি তাদের ট্রিটমেন্ট দিতে হচ্ছে। সারাদেশে লকডাউন বাস্তবায়ন থেকে নিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিরলস শ্রম দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এই প্রথম তাদের কোনো কাজে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা আসছে। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই অসামান্য অবদানের জন্য তাদের সবাইকেই সাধুবাদ জানাই।
সামনে আমাদের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। প্রায় সবারই আপনজন বা নিকটজন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে করোনা। সে জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সবার আগে করোনা আতংকে মানুষের সাথে নির্মমতা বন্ধ করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করে এই কঠিন সময়েও সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর বিশ্বাস রাখতে হবে জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে। কারো মৃত্যুই নির্ধারিত সময়ের আগেও হবে না। পরেও হবে না। এখন এই বিশ্বাসই আমাদের মনোবল শক্ত রাখতে পারে। কারণ এই বিশ্বাস ছাড়া আর কোনো ভ্যাকসিন আমাদের হাতে নেই।
-লেখকের ফেইসবুক পোস্ট থেকে
হারিয়ে যায়নি আলেম সমাজ
—————————————
ইহসানুল হক
আন-নূর:প্রায় চার মাসের এই লকডাউনে অনেক নিষ্ঠুরতার সাক্ষী আমাদের হতে হয়েছে। সন্তান মাকে ফেলে এসেছে জঙ্গলে। বাবাকে বস্তাবন্দি করে রেখে এসেছে রাস্তায়। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা বাবা এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করেও লাভ হয়নি। মৃত্যু বরণের পর এলাকাবাসী লাশ বহনের খাটিয়া দেয়নি। কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। জানাযা পড়তেও কেউ আসেনি। এমন অনেক নিষ্ঠুরতার গল্প আমরা জানি। বলতে চাইলে আরও অনেক বলা যাবে।
হটাৎ থমকে যাওয়া পৃথিবীতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। মধ্যবিত্তরাসহ দিনমজুর কয়েক কোটি মানুষ সীমাহিন অর্থ কষ্টে নিপতিত হয়েছে। সরকার নানা ধরনের মুখরোচক প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও এতে কার সংকট যে দূর হলো তা আল্লাহই ভালো জানেন। করোনা ছাড়া সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা বলা যায় এখন বন্ধই হয়ে গেছে। সাধারণ কোনো রোগী নিয়ে যে হাসপাতালে গিয়েছে সেই কেবল জানে অবস্থাটা কি। জনগণের সেবার নামে রাজনীতি করা অনেক নেতাদের এখন খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এই কঠিন দুঃসময়ে এভাবে অনেকেই হারিয়ে গেলেও হারায়নি আলেম সমাজ। তারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সমাজে ধর্মীয় যে দায়িত্ব তারা পালন করে থাকে, সেখান থেকে তারা পিছু হটেনি। করোনা আতংকে মানুষ কত কাজই তো ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু সারা দেশে এত এত মসজিদ। কেনো মসজিদের ইমাম কি বলেছে আমরা নামাজ পড়াতে পারবো না। এত মানুষ মসজিদে আসে। করোনা রোগীও আসতে পারে। এটা বলেছে কেউ? বলেনি। তারা কি সরকারের কাছে পিপিই চেয়েছে? তাও চায়নি। তাদের কি আতংকের কিছু নেই?
ব্যাপারটা নিশ্চয় এমন না যে তারা মনে করে উলামায়ে কেরামের করোনা হবে না। আলেম, জালেম, ভালো, মন্দ যে কারোই করোনা হতে পারে। তবে আল্লাহ পাক যার ক্ষেত্রে চাইবেন তারই হবে। মানুষের মধ্যে থাকলেই হবে, আর পালিয়ে গেলেই হবে না এমনটা নয়। যে কারোই হতে পারে। এবং হলেই যে মরে যেতে হবে তাও নয়। আল্লাহ পাক যখন মৃত্যু অবধারিত রেখেছেন তখনই মরতে হবে,এই বিশ্বাস আছে বলেই উলামায়ে কেরাম সবার আগে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে।
বাবা মার লাশ যখন সন্তান স্পর্শ করে না। স্বামী যখন স্ত্রীর লাশের ছায়াও দেখতে চায় না তখন এগিয়ে এসেছে উলামায়ে কেরাম। সরকারি অনুমোদনে মুফতি শহিদুল ইসলামের আল মারকাজুল ইসলামী লাশ দাফনের যুগাম্তকারি কাজ করে যাচ্ছে। মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন জেলায় লাশ দাফনের কাজ করছে। এভাবে সারা দেশেই উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন ব্যানারে একত্রিত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন। উলামায়ে কেরামের এই অবদান কি জাতি স্মরণ রাখবে?
শুধু লাশ দাফনই নয়, দিনমজুর অসহায় ও অর্থের অভাবে না খেয়ে থাকা মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণে ঝাপিয়ে পড়েছে উলামায়ে কেরাম।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, তাকওয়া ফাউন্ডেশন, রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন, ইকরামুল মুসলিমিন, হাফেজ্জি হুজুর সেবাসংস্থা, যুব মজলিসসহ উলামাদের নেতৃত্বে পরিচালিত আরও অনেক সংগঠনের উদ্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছেছে। দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতায় উলামাদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে গেছে দেশের আনাচে কানাচে। বিশেষকরে রমজানে উলামায়ে কেরামের এই ত্রাণ তৎপরতায় অসংখ্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। উলামায়ে কেরামের এই অবদান জাতির সামনে তুলে ধরার কেউ কি আছে?
অথচ সবচেয়ে বেশি অর্থ সংকটে থাকা শ্রেণির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই আলেম সমাজ। সারা দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধ। বেতন ভাতাও অধিকাংশের বন্ধ। তবুও তারা করোনাভয়ে অমানুষ হয়নি। দায়িত্ব থেকে পিছু হটেনি। কোনো আপনজন অসুস্থ হলে রাস্তায় ফেলে আসেনি। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। যেই ধর্মীয় শিক্ষা জাতির দুর্দিনে এই মহান কর্মে তাদের নিয়োজিত করলো সেই ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে। সমাজে উলামায়ে কেরামের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে।
আর হ্যাঁ, বিপর্যস্ত এই সময়ে মানুষের সেবা শুধু আলেমরাই করছে না। আরও অনেকেই মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন। সবচেয়ে বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন ডাক্তার ও চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পৃক্ত শ্রেণি। সরাসরি তাদের ট্রিটমেন্ট দিতে হচ্ছে। সারাদেশে লকডাউন বাস্তবায়ন থেকে নিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিরলস শ্রম দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এই প্রথম তাদের কোনো কাজে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা আসছে। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এই অসামান্য অবদানের জন্য তাদের সবাইকেই সাধুবাদ জানাই।
সামনে আমাদের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। প্রায় সবারই আপনজন বা নিকটজন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে করোনা। সে জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সবার আগে করোনা আতংকে মানুষের সাথে নির্মমতা বন্ধ করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করে এই কঠিন সময়েও সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর বিশ্বাস রাখতে হবে জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে। কারো মৃত্যুই নির্ধারিত সময়ের আগেও হবে না। পরেও হবে না। এখন এই বিশ্বাসই আমাদের মনোবল শক্ত রাখতে পারে। কারণ এই বিশ্বাস ছাড়া আর কোনো ভ্যাকসিন আমাদের হাতে নেই।
-লেখকের ফেইসবুক পোস্ট থেকে

Post a Comment