Header Ads

যেমনেই হোক মাকে তার চাইই চাই। আন-নূর নিউজ




হুসাইন আহমদ।

কোলের পর কোল পরিবর্তন করছে কিন্তু মায়ের চেহরা দেখছে না তৌফিক।খালা-ফুপি,দাদি-নানির কোলে খুঁজছে মায়ের ঘ্রান। হৃদয় নিংড়ানো আদর মাখা শত চুমুতে আজ ওর কপাল ভরা । কিন্তু সে খুঁজে ফিরছে  ঘর্মাক্ত  সেই মায়ের ঠোটের চুমু।থামছেনা কান্না। খাওয়া- দাওয়া সব বন্ধ। শুধু কান্না আর কান্না। সারা রাত কান্না করেছে। কেউই থামাতে পারনি। সারা রাত ঘুমায়নি। মাকে ছাড়া সে যেন ঘুমাতে নারাজ।সে কিছুই বুঝেনা। যেমনেই হোক মাকে তার চাইই চাই।
বলছিলাম আমার  সহোদর ভাই তুল্য খালাত ভাই মিজানুর রহমানের মা হারা সন্তানের কথা। ভাই আমার ভালুকায় এক টেক্সটাইলে চাকুরী করে।মেশকাতের বছর ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছিলাম।  দাম্পত্য জীবনের ৫ বছর পর কোল জুড়ে এলো তৌফিক। সংসারে সুখের আমেজ। আমেজের গাড়ি গড়িয়ে চলল ১০ মাস। দাম্পত্য জীবনে নেমে এলো কালো অন্ধকার। হঠাৎ বুক ব্যথা। নেওয়া হল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার গ্যাসের সমস্যা ও শরীর দূর্বল বলে লিখল ঔষধ । দুপুর ও রাতে ঔষধ সেবনের পরও কমলোনা বুক ব্যথা। রাতেই যোগাযোগ শুরু হল ভালুকা,মাওনার বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে। করোনা ভাইরাসের কারনে কোন ডাক্তারই রুগী দেখছেন না। হাসপাতাল গুলো ডাক্তার শূণ্য। অনেক চেষ্টায় একজন ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেল দুপুর আড়াইটায়। রাত যেন দাড়িয়ে আছে আপন জায়গায়। রাত হতে থাকল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। খালার ডায়াবেটিস অনেক বেশি তাই খালত ভাই মাকে শুয়ে যেতে বলে। খালাত প্রিয়তমা স্ত্রীর খেদমতের পাশাপাশি  রাত পোহাবার অপেক্ষায়। রাত ৩ টা। তৌফিক জেগে গেছে। মায়ের আভাস না পেয়ে কান্না করছে। খালত বাচ্চাকে থামিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করছে। কান্না শুনে পাশের ঘর থেকে খালা আসছে।বৌ মার হাত পা হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে,কপালে ঘাম। খালা তেল গরম করে হাতে, পায়ে, বুকে মালিশ করছে।দোয়া দরুদ চলছে অনবরত। তৌফিকের আম্মা বলে উঠে, ''আম্মা পানি খাব।" খালা জমজমের  পানি খাওয়ায়। স্যালাইন খাওয়ায়।কিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল।ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। নামাজ পর  খালাতকে ফোন দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য। ও কথা বলছিল আর কান্না করছিল আর বারবার দোয়া করতে বলছিল  হঠাৎ ফোনটা কেটে গেলো। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। আবার ফোন দিলাম। রিসিভ হলো না। আবার ফোন দিলাম। বাসা ওয়ালী রিসিভ করে জানালেন তৌফিকের আম্মা আর নেই। কেঁপে উঠল মন।নিষ্পাপ  এতিম তৌফিকের  কথা ভেবে অঝোরে ঝরছিল অশ্রু। কেউই ভাবতে  পারেনি এভাবে চলে যাবে তৌফিকের মা। মাত্র দুদিনের অসুস্থতায়  সব এলোমেলো হয়ে গেল। হে আল্লাহ ধৈর্য্য দাও.........
হাত বাড়ালেই কোলে এসে চেহার দিকে তাকিয়ে থাকে তৌফিক। এটা মা নয়। চলে যায় আরেক কোলে। এভাবে করতে থাকে কোল বদল।অবুঝ শিশু তৌফিক। বয়স মাত্র ১০ মাস।হে আল্লাহ্ তুমি অবুঝ শিশুকে বুঝ দাও। দাও উভয় পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণের তাওফীক। তৌফিকের মাকে ক্ষমা করে দাও। দান কর জান্নাতুল ফেরদাউস। আমিন।