Header Ads

তরুণ লেখকদের প্রতি হৃদয়ের আকুতি; সৈয়দ শামছুল হুদা।আন-নূর

 

      তরুণ লেখকদের প্রতি হৃদয়ের আকুতি

      সৈয়দ শামসুল হুদা


আন-নূর: বর্তমান করোনাভাইরাস কালে আমাদের তরুণ লেখকরা অনেকটাই অবসর সময় কাটাচ্ছেন। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজারো তরুণ লেখক রয়েছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে নিজেদেরকে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে তৈরি করছেন। আমি সেই সকল বন্ধুদের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে আহ্বান জানাবো, আসুন! আমরা আমাদের নিজ নিজ এলাকার প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, গবেষক আলেমদের জীবনী নিয়ে লেখালেখি করি। তাদেরকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরি। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় অসংখ্য এমন মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদেরকে দেশের অন্য জেলার সাধারণ মানুষ জানেন না, চিনেন না। অথচ আপনার কাছে তিনি একজন মহান ব্যক্তি। আপনার কাছে তিনি একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। আপনার কাছে তিনি একজন আল্লাহওয়ালা। দ্বীনদার। পরিশ্রমী জ্ঞানসাধক। তার হাতে তৈরি হয়েছে হয়তো ঐ এলাকার ঐ জেলার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। যার সম্পর্কে দেশের মানুষ কিছুই জানে না। 

প্রিয় লেখক বন্ধুরা আমরা ফেইসবুকে অনেক কিছুই লিখি। নানান বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করি। তা না করে আপনাদের কাছে আমি দুটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। এর একটি হলো আমাদের সারাদেশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে যে সকল বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান এর যারা প্রতিষ্ঠাতা,  অথবা ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের যিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ওস্তাদ রয়েছেন তাদের জীবনের অনেক কাহিনী আপনি জানেন,  অন্য কেউ জানে না। তাদের কাহিনীগুলো আপনি তাদের কাছ থেকে শোনে লিখুন এবং ফেসবুকে শেয়ার করুন।

এর মাধ্যমে আমরা একটি জীবনী শিল্প গড়ে তুলতে পারি। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ আলেম আছেন যাদের কোরবানির বিনিময়ে ইসলাম তৃণমূল পর্যায়ে সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। তাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে এদেশে এখনো শিরক- বিদআতের জোয়ার সৃষ্টি হয়নি। এখনো এই দেশে নাস্তিকরা যা খুশি তাই করার সাহস পায় না। এমন অনেক অনেক দেশপ্রেমিক সাহসী আলেম আছেন।  তাদের জীবনীগুলো চমৎকারভাবে তুলে নিয়ে আসুন। আপনার ওস্তাদের কাছে যান। তাদের কাছ থেকে কাহিনী শুনুন। তাদের গল্প গুলো শুনুন। তাদের জ্ঞান অর্জনের পথে তাদের কি কি প্রতিবন্ধকতা ছিল,  তারা কিভাবে জ্ঞানার্জন করেছেন, তারা কিভাবে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন,  কিভাবে ছাত্র গড়ে তুলেছেন,  ছাত্রদের প্রস্তুত করেছেন, এগুলো সংগ্রহ করুন। নোটবুকে নোট করুন। তারপর সুন্দর করে সাজিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করুন। যারা বড় বড় লেখক তারা আপনার এই  লিখনী থেকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হয়তো পেয়ে যাবে। এসব জীবনী থেকে চার পাঁচটা জীবনী হয়তো তাদের পছন্দ হয়ে যাবে এবং তারা নিজেরা এ নিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত হবেন। এবং দেখা যাবে তাদের জীবনীগুলো প্রকাশও করছেন।

আপনার এলাকার দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কেও লিখুন। দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গুলো কিভাবে গড়ে উঠলো? তার ইতিহাস এর সাথে কারা জড়িত ছিলেন? সেই প্রতিষ্ঠাতাদের ইতিহাস সংগ্রহ করুন। সংরক্ষণ করুন এবং প্রকাশ করুন। এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যা জানে না তা জানতে পারবেন। প্রত্যেকটি জেলায় উপজেলায় এমন এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খুবই চমৎকার। খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের যারা প্রতিষ্ঠাতা তাদের সেই সময়কার কুরবানী অনেক বড়। সুতরাং আমাদের কাজ হবে আমাদের সামনে যারা জীবিত আছেন, যারা কিছুদিন আগে চলে গিয়েছেন তাদের সম্পর্কে মানুষকে জানানো।। তাদের সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা তৈরি করা।

আমাদের একটি ভুল ধারণা এই যে, আমরা মনে করি,  খুব বড় মাপের আলেম না হলে তাদের নিয়ে লেখালেখির কিছু নেই। বরং আমি মনে করি আমার কাছে যিনি  বড়, আমি যাকে ভালো করে চিনি,  তিনিই অনেক বড়। সারাদেশের মানুষের কাছে তাঁকে খুব বড় করে তুলে ধরা হলেই তিনি বড় হয়ে উঠবেন। আপনার যিনি শিক্ষক, আপনার যিনি মুরুব্বী,  আপনার কাছে তিনিই অনেক বড়। তার সম্পর্কে আপনার অনেক আবেগ,  অনেক প্রত্যাশা রয়েছে,  আপনি তাকে নিয়ে লিখতে তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। তাঁর জ্ঞানগর্ভ নসিহত গুলো সামনে নিয়ে আসেন । দেখবেন সুন্দর জীবনী শিল্প গড়ে উঠছে। আপনার হাতে জীবনী সাহিত্য  প্রাণ পাচ্ছে। দেখবেন আপনার মাধ্যমে আপনার ওস্তাদ দিনে দিনে অনেক বড় হয়ে উঠছেন। অনেক মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠছেন।

নিকটবর্তী সময়ে অনেক বড় বড় আলেম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের জানাযায় হাজার হাজার নয় লাখো মানুষ উপস্থিত হয়েছে। ফেসবুকে এসব জানাযার বিশাল বিশাল ছবি এসেছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো: তিনি যে এতবড় ব্যক্তি ছিলেন, এ সম্পর্কে দেশের সাধারণ মানুষ কিছুই জানে না। কেন মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেব এর জানাযায় এত মানুষ লকডাউন উপেক্ষা করে হাজির হলো, সে সম্পর্কে স্যোসাল মিডিয়ায় কয়টা লেখা দেখেছেন? এমনিভাবে মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, মাওলানা মুফতি ইদ্রিস, মাওলানা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব সাহেব সম্পর্কে কয়টি পর্যালোচনামূলক লেখা দেখেছেন? আমরা আমাদের আকাবিরদেরকে কাগজের পাতায় ধরে রাখতে না পারলে উনাদের ত্যাগ ও কোরবানী একদিন হারিয়ে যাবে। মানুষ বলবে, দেশ ও জাতি গঠনে কওমী মাদ্রাসার কী অবদান আছে? তাদের কী ভূমিকা আছে? এ প্রশ্ন করবেই। তাই তরুন লেখকদের দায়িত্ব নিতে হবে, বড়দেরকে কাগজের পাতায় তুলে নিয়ে আসতে। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।  

লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে