Header Ads

স্বদেশ প্রেমের গল্প; মাহমুদুল হাসান আরমান।আন-নূর মিডিয়া



            স্বদেশ প্রেমের গল্প

মাহমুদুল হাসান আরমান


হাঁটতে হাঁটতে অস্হির হয়ে একটা বটবৃক্ষের তলায় গিয়ে বসলো আবির।তেজস্বী  সূর্য ধীরে ধীরে শান্ত হতে চলেছে।মধ্যাহ্ন ভোজের পর ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে সবাই।মৃদু বাতাসে বটপাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ।অলস দুপুরে এসে যেনো নেতিয়ে পড়েছে প্রকৃতি। মাঝে মধ্যে ঘুঘু পাখির ডাকে জেগে উঠছে চারদিক। তেতে ওঠা রোদ্দুর আর ঘন বনানীর রোদছায়া খেলা চলছে অনেক্ষণ।প্রকৃতি জুড়ে যেনো স্বর্গীয় আবহ বইছে এখন;কিন্তু আবিরের এসবে মন নেই কোন।ক্ষুধায় ওর পেট পিন পিন করছে।
শুধু পানিতে আর কয়দিন বাঁচা যায়!পেটের পোকাগুলো নাড়ি ভুঁড়ি কামড়ে ধরছে এখন।উঠতে,বসতে, চলতে কিছুতেই ভালো লাগছে না আর। অস্থির হয়ে পড়েছে আবিরের দেহমন।তবুও উঠতে হবে তাকে। নরপিচাসগুলো যে মরিয়া হয়ে খুঁজছে ওকে।কোন মতন সন্ধান পেলেই হলোএকবার।রক্ষে নেই আর। হায়েনাগুলো কি যে করবে!
আবির উঠে দাঁড়ালো।সঙ্গে নিয়ে আসা থলেটা কাঁধে নিয়ে আবার চলতে লাগলো আস্তে আস্তে।পাহাড়ের কোল ঘেষে একফালি রাস্তা।নীরব নিস্তব্ধ গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে প্রায়। যে করেই হোক সূর্য ডুবার আগেই পাহাড়টা পারি দিতে হবে। তাই একটু ঘন ঘন কদম ফেলতে লাগলো আবির।হঠাৎ আজানের শব্দে থমকে দাঁড়ালো সে।প্রথমে আঁচ করতে পারেনি খুব একটা।তাই পা টিপে টিপে আরেকটু সামনে এগুলো,হ্যাঁ,এইতো!ডান দিক থেকেই তো আসছে আওয়াজটা।আবিরের ক্লান্ত শরীরে হঠাৎ আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। সফরের একমাত্র সঙ্গি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে সামনে চলতে লাগলো আবার।আজানের শব্দ ধরে কিছু দূর এগুতেই স্বদেশী ভাষায় কেউ এক জন চেঁচিয়ে উঠলো- এই কে?কেরে এখানে?একদম সামনে এগুবে না,গুলি করে দেবো বলছি।হঠাৎ ক্লাসিনকোভ তাক করে আবিরের সামনে লাফিয়ে পড়লো একজন।ওর পুরো শরীর ভালো করে চেক করে ক্যাম্পের ভেতরে ধরে নিয়ে গেলো।
আবিরের চেহারায় ভীতির কোন ছাপ নেই;কারন সে ভালো করেই জানে এটাই যে তার নিরাপদ যায়গা।আল্লাহ কুদরতি সাহায্যে তাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছেন।আবির ক্যম্পের দায়িত্বশীলদের কাছে তার সব ঘটনা খুলে বললো।সে যে তাদেরই ফেলে আসা জাতি ভাই এটা বুঁজতে পেরে ওরা জড়িয়ে ধরলো আবিরকে।এলাকার সংবাদ জানার জন্য অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে এতক্ষণে ওর চারপাশে।আবিরের মুখে রা বেরুচ্ছে না ক্ষুধায়।অনেক কষ্টে বললো-আমাকে থাকলে কিছু খাবার দিন,পেটের যন্ত্রনায় কথা বলতে পারছি না আর।
একজন কিছু রুটি আর পস্তা নিয়ে এলো।খানা শেষ হলে তাকে বিশ্রামে রেখে সবাই রুম খালি করে দিলো।
আবিরের যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে।সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করে একজন সাথিকে নিয়ে বের হলো ক্যাম্পটা ঘুরে দেখার জন্য।পাহাড়ি ঝুপ ঝাড়ের ভেতর চমৎকার একটা পরিবেশ।
ত্রিশ জন মুক্তিকামী যোদ্ধার ছোট্ট এ ক্যাম্পটির  কমান্ডার  জুরাইজ আল আরকানী।প্রাতঃভ্রমণের পর আবিরকে নিয়ে যাওয়া হলো কমান্ডার স্যারের কামরায়। জুরাইজ আল আরকানীকে দেখেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লো আবির।কান্নায় দুচোখ ভিজে উঠলো মনের অজান্তেই।
ওরা আমার বাবাকে শহীদ করেছে।আমার প্রিয় মা ও বোনটাকে অকথ্য নির্যাতনের পর নির্মমভাবে  হত্যা করে দিয়েছে।এখন আমাকেও খুঁজে বেড়াচ্ছে ওরা হন্যে হয়ে।
আমি আমার পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চাই;আমি আর পালিয়ে বাঁচতে চাই না।
আমার বুকের প্রতি ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশ ও জনগণকে স্বাধীন করতে চাই।দয়া করে আপনাদের এ মুক্তির মিছিলে আমাকেও শরিক করুন আমির সাহেব!আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি -আমার শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত ঐ নরপিচাসদের মোকাবেলা করবো,করবোই ইনশাল্লাহ